সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন
রাজশাহী প্রতিনিধি ॥
বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ করে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সন্ত্রাসী লালনের অভিযোগ তুলে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলম বেন্টুকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্টিত হয়েছে। বুধবার (২৩-১০-১৯) সকাল ১০টার সময় মহানগরীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে)।
এসময় দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক এবং দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রাজশাহীর এই আওয়ামী লীগ নেতার দায়ের করা মামলায় সাংবাদিকদের নামে অপপ্রচার, হুমকি ও হয়রানির প্রতিবাদে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। এতে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেয় রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) জেলা শাখা, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন এবং রাজশাহী জেলা লোকমোর্চা। এসব সংগঠনের সদস্যরাও আওয়ামী লীগ নেতা বেন্টুকে দল থেকে বহিষ্কার এবং গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
উক্ত মানববন্ধনে বাপার জেলা শাখার সভাপতি জামাত খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশে দুর্নীতি থাকবে না। দুষ্কৃতিকারী যে দলেরই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু গণমাধ্যম যখন দুষ্কৃতিকারীদের অপকর্মের কথা তুলে ধরছে তখন মামলা করা হচ্ছে। রাজশাহীর আজিজুল আলম বেন্টু প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, পত্রিকাটির বিশেষ প্রতিবেদক আব্দুল্লাহ-আল-মামুন ও রাজশাহী ব্যুরো প্রধান রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এটা রাজশাহীবাসীর জন্য লজ্জার। এই বেন্টু স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা গোলাম মোর্শেদ হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তিনি খুন করেছেন, এটা আদালতে প্রমাণিত হয়েছে। তার মতো একজন খুনি আওয়ামী লীগের পদে থাকেন কী করে প্রশাসনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বেন্টু একজন নদীখেকো, বালুখেকো। প্রশাসন ঘুমিয়ে থাকবেন না। রাজশাহীবাসী আপনাদের পাশে আছে। প্রধানমন্ত্রী অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। অভিযান তৃণমূলেও শুরু করেন। বেন্টুর মতো লোকদের গ্রেপ্তার না করলে উন্নয়ন ভেস্তে যাবে। তাকে গ্রেপ্তার করে সম্পদের হিসাব নেয়া হোক। পাশাপাশি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হোক।
রাজশাহী নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সভাপতি সেলিনা বেগম বলেন, এলাকায় মাদক ব্যবসার বিরোধীতা করেছিল আমার ছেলে। বেন্টুর ক্যাডাররা তাকে আবরার ফাহাদের মতো করে নির্যাতন করেছিল। তার শরীরে এখনও ৩০০ সেলাইয়ের চিহ্ন রয়েছে। সাতটি দাঁত ভেঙে দিয়েছে। বেন্টুর ভয়ে কেউ রক্ষা করার সাহস পায়নি। কেউ হাসপাতালে নিতে পারেনি। আজ এই বেন্টুর কার্যকলাপ যখন পত্রিকাগুলো তুলে ধরছে তখন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে।
আরইউজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান খান আলম বলেন, বেন্টুর অপকর্ম যেসব সাংবাদিক তুলে ধরছেন তাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অপপ্রচার করা হচ্ছে। মামলা করা হচ্ছে। কিন্তু এটা করে কলম বন্ধ করা যাবে না। সাংবাদিকরা তাদের কাজ করবেনই।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহ-সভাপতি মামুন-অর-রশিদ বলেন, বেন্টুর কারণে রাজশাহীর সাংবাদিকরা আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তিনি মানহানির মামলা করেছেন, যার কোনো মানই নেই। তিনি এখন টাকা খরচ করে সাংবাদিকদের নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। গুজব ছড়াচ্ছেন। ষড়যন্ত্র করছেন। আমরা এসবের প্রতিবাদ জানাই।
প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন আরইউজের সভাপতি কাজী শাহেদ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কি এতোটাই দেউলিয়া হয়ে গেছে যে বেন্টুর মতো একজন প্রমাণিত খুনিকে পদ দিতে হবে? তার পয়সায় দল চালাতে হবে? আগামী কাউন্সিল নয়, এই মূহুর্তে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করতে হবে। আর বেন্টু যে মানহানির মামলা করেছেন সেটি আমরা প্রত্যাহারের দাবি জানাই না। আমরা আদালতেই দেখতে চাই, আসলেই তার কতটুকু মান-সম্মান আছে। আরইউজের সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক মানববন্ধন পরিচালনা করেন।
আরও বক্তব্য দেন, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হারুন-অর-রশিদ, রাজশাহী জেলা লোকমোর্চার সদস্য গোলাম কিবরিয়া, আরইউজের নির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান টুকু ও সিনিয়র ফটোসাংবাদিক আজাহার উদ্দিন।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- আরইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিবলী নোমান, সিনিয়র সাংবাদিক কাজী গিয়াস, শ.ম সাজু, সুব্রত দাস, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলার সমন্বয়কারী সুব্রত পাল, আরইউজের কোষাধ্যক্ষ সরকার দুলাল মাহবুব, নির্বাহী সদস্য সামাদ খান, সদস্য আবদুল করিম, তবিবুর রহমান মাসুম, শামিম হোসেন, আবরার শাঈর, মাইনুল হাসান জনি, রিমন রহমান প্রমুখ।